
কক্সবাজারের সকল দর্শনীয় স্থানসমূহ
কক্সবাজার বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন শহর, যা মূলত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত। তবে কক্সবাজারে শুধু সৈকতই নয়, আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। কক্সবাজারের আশপাশে এতগুলো দারুণ জায়গা আছে—অনেকেই জানেই না সেগুলোর কথা। নিচে কক্সবাজারের বিখ্যাত ও কম পরিচিত কিন্তু মনোমুগ্ধকর দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:
১. সমুদ্র ও সৈকত
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
- বর্ণনা: বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। সূর্যাস্ত, বীচ বাইক, খাবারের দোকান, জেট স্কি, ঘোড়ার গাড়ি এখানে জনপ্রিয়।
- বৈশিষ্ট্য: পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত
- অবস্থান: কক্সবাজার শহর
- যাওয়ার উপায়: বাস/বিমানযোগে কক্সবাজার, সেখান থেকে রিকশা/টমটমে সহজেই যাওয়া যায়
লাবণী পয়েন্ট
বৈশিষ্ট্য: শহরের সবচেয়ে কাছাকাছি ও মূল সৈকত
সুগন্ধা সৈকত
বৈশিষ্ট্য: ঘোড়ার গাড়ি ও সমুদ্রস্নানের জন্য বিখ্যাত
কলাতলী সৈকত
বৈশিষ্ট্য: হোটেল রিসোর্ট ঘেরা ও জনপ্রিয় সৈকত
ইনানি সমুদ্র সৈকত
- বর্ণনা: প্রবাল পাথরের জন্য বিখ্যাত। জোয়ারের সময় প্রবালগুলো জলে ডুবে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি করে।
- বৈশিষ্ট্য: প্রবাল পাথর, পরিষ্কার পানি
- অবস্থান: উখিয়া, কক্সবাজার থেকে ২৫-৩০ কিমি দূরে
- যাওয়ার উপায়: কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে জিপ/সিএনজি
হিমছড়ি সৈকত ও জলপ্রপাত
- বর্ণনা: পাহাড়, ঝরনা এবং সৈকতের সম্মিলনে তৈরি এক অপূর্ব লোকেশন। বর্ষাকালে ঝরনার জলধারা বেশি দেখা যায়।
- বৈশিষ্ট্য: পাহাড় ও সমুদ্রের মিলন
- অবস্থান: কক্সবাজার সদর
- যাওয়ার উপায়: মেরিন ড্রাইভ ধরে অটো/জিপে ২০-২৫ মিনিট
টেকনাফ সৈকত
- বর্ণনা: তুলনামূলক নির্জন সৈকত, নাফ নদী ও মিয়ানমার সীমান্তের সৌন্দর্য একত্রে উপভোগ করা যায়।
- বৈশিষ্ট্য:
- অবস্থান: টেকনাফ উপজেলা, নাফ নদীর তীর
- যাওয়ার উপায়: কক্সবাজার শহর থেকে বাসে বা প্রাইভেট কারে টেকনাফ
বাহারছড়া সৈকত ও প্যারাবন
- বর্ণনা: কম জনবসতিপূর্ণ, শান্ত পরিবেশ ও প্যারাবনের ঘনত্ব একে অফবিট ট্রাভেলারদের প্রিয় বানিয়েছে।
- বৈশিষ্ট্য: নিরিবিলি ও কম জনবহুল
- অবস্থান: টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়ন
- যাওয়ার উপায়: টেকনাফ থেকে সিএনজি/জিপে
ছবির কাঠের ব্রিজ ও ঝাউবন
বৈশিষ্ট্য: ইনানি এলাকায়, ছবি ও রিলসের জন্য বিখ্যাত
২. দ্বীপ ও সমুদ্রযাত্রা
সেন্টমার্টিন দ্বীপ
- বর্ণনা: বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। স্বচ্ছ পানি, মাছভাজা, সাইকেল রাইড, স্নরকেলিং—সবই পাওয়া যায়।
- বৈশিষ্ট্য:একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, জাহাজযোগে যাওয়া যায়
- অবস্থান: টেকনাফ উপজেলা
- যাওয়ার উপায়: টেকনাফ থেকে জাহাজ (গ্রীনলাইন, সীট্রাক, সিন্দাবাদ ইত্যাদি); ২-২.৫ ঘণ্টা সময় লাগে
ছেঁড়াদ্বীপ
- বর্ণনা: একদম নির্জন, শান্ত, বন্যপ্রাণ ও পাথরপূরণ। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য স্বর্গ।
- বৈশিষ্ট্য:নির্জন, ট্রেকিং ও স্নরকেলিং স্পট
- অবস্থান: সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণে
- যাওয়ার উপায়: হেঁটে বা নৌকায় সেন্ট মার্টিন থেকে
মহেশখালী দ্বীপ
- বর্ণনা: পাহাড়, আদিনাথ মন্দির, বৌদ্ধবিহার এবং শুঁটকি শিল্পে সমৃদ্ধ এক ঐতিহাসিক দ্বীপ।
- বৈশিষ্ট্য: পাহাড়চূড়ায় হিন্দু তীর্থস্থান
- অবস্থান: কক্সবাজারের উত্তরে
- যাওয়ার উপায়: কক্সবাজার ৬নং জেটি থেকে স্পিডবোট
আদিনাথ মন্দির, মহেশখালী
- সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত শিবমন্দির। বার্ষিক মেলা হয়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান, ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের।
- বৈশিষ্ট্য:পাহাড়, আদিনাথ মন্দির, শিল্প সংস্কৃতি
- অবস্থান: মহেশখালী দ্বীপ, কক্সবাজার
- যেভাবে যাওয়া যায়: কক্সবাজার শহরের ৬নং জেটি থেকে স্পিডবোটে মহেশখালী, তারপর টমটম/রিকশায়
সোনাদিয়া দ্বীপ
- বর্ণনা: পাখি পর্যবেক্ষণ, নির্জনতা আর জোয়ার-ভাটার খেলা দেখতে চাইলে সেরা। লোকাল স্পিডবোট কম, রিজার্ভ করতে হয়।
- বৈশিষ্ট্য:পাখি ও ম্যানগ্রোভ, রিজার্ভ বোটে যাওয়া যায়
- অবস্থান: মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়ন
- যাওয়ার উপায়: কক্সবাজার শহর থেকে ৬নং জেটি → স্পিডবোটে সোনাদিয়া
কুতুবদিয়া দ্বীপ ও বাতিঘর
- বর্ণনা: বাতিঘরটি দেশের প্রাচীনতম। দ্বীপজীবন, শুঁটকি এবং আঞ্চলিক জীবনচর্চা বোঝার ভালো সুযোগ।
- বৈশিষ্ট্য:ঐতিহাসিক বাতিঘর, নৌপথে যাত্রা
- অবস্থান: কুতুবদিয়া উপজেলা
- যাওয়ার উপায়: কক্সবাজার/চকরিয়া → চৌফলদণ্ডি ঘাট → নৌপথে কুতুবদিয়া
মহেশখালী জেটি
বৈশিষ্ট্য:দ্বীপে যাতায়াতের কেন্দ্রবিন্দু
৩. পাহাড় ও প্রাকৃতিক দৃশ্য
হিমছড়ি পাহাড় ও জলপ্রপাত
- বর্ণনা: পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে জলপ্রপাত। উপরে উঠলে সমুদ্রের চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। রেইনফলে জলপ্রপাত আরও প্রাণবন্ত হয়।
- বৈশিষ্ট্য: ঝরনা ও পাহাড়ি রাস্তা
- অবস্থান: কক্সবাজার সদর, মেরিন ড্রাইভ রোডে
- যাওয়ার উপায়: কক্সবাজার শহর থেকে অটো/টমটম বা প্রাইভেট জিপে ২০ মিনিট
ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক
- বর্ণনা: এটি দেশের প্রথম সাফারি পার্ক। হরিণ, হাতি, বাঘসহ নানা বন্যপ্রাণী রয়েছে। পরিবারসহ ঘোরার জন্য আদর্শ।
- বৈশিষ্ট্য: বন্যপ্রাণী, হাতি, হরিণ
- অবস্থান: চকরিয়া উপজেলা, কক্সবাজার
- যাওয়ার উপায়: কক্সবাজার থেকে বাসে বা গাড়িতে চকরিয়া → ডুলাহাজারা
মেরিন ড্রাইভ রোড (কক্সবাজার-টেকনাফ)
- বর্ণনা: বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সাগর-পাহাড়ঘেঁষা সড়ক। সমুদ্র ও পাহাড় একসাথে উপভোগের দুর্লভ অভিজ্ঞতা দেয়।
- বৈশিষ্ট্য: পাহাড় আর সমুদ্রের পাশে বিশ্বের সেরা রোডের একটি
- অবস্থান: কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত
- যাওয়ার উপায়: যেকোনো যানবাহনে ভ্রমণ করা যায় (জিপ/মাইক্রো/বাইক)
গর্জন বন, কক্সবাজার
- বর্ণনা: পুরনো গর্জনগাছে ঘেরা এই বন নিস্তব্ধ ও ছায়াময়। পর্যটকদের জন্য ছোট ভ্রমণ ও ঘোরাঘুরির স্পট।
- বৈশিষ্ট্য: ঘন সবুজ বনভূমি
- অবস্থান: কক্সবাজার শহরের কাছাকাছি
- যাওয়ার উপায়: টমটম/রিকশা করে শহর থেকে
শীলখালী ট্রেইল
- বর্ণনা: পাহাড়ি পথ ও পাথরঘেরা পথের সংমিশ্রণ। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য উপযুক্ত ট্রেইলিং লোকেশন।
- বৈশিষ্ট্য: ট্রেকিং ও হাইকিং
- অবস্থান: উখিয়া উপজেলায়, ইনানির আশেপাশে
- যাওয়ার উপায়: ইনানি হয়ে স্থানীয় গাইডসহ ট্রেইলে যাওয়া যায়
ঈদগাঁও ঝরনা ও পাহাড়
- বর্ণনা: নতুন আবিষ্কৃত অফবিট ঝরনা। বৃষ্টি ও বর্ষায় বেশি জল থাকে, ট্রেকিংয়ের মজা পাওয়া যায়।
- বৈশিষ্ট্য: অফবিট লোকেশন
- অবস্থান: ঈদগাঁও, কক্সবাজার সদর থেকে উত্তরে
- যাওয়ার উপায়: কক্সবাজার থেকে সিএনজি/জিপে ঈদগাঁও → স্থানীয়ভাবে ঝরনার দিক
রিজুক ঝরনা (সীমান্তবর্তী)
- বর্ণনা: অনেকটা গহীন জায়গায় অবস্থিত। বিশাল জলপ্রপাত, পাহাড় আর সবুজ ঘেরা এক অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণ।
- বৈশিষ্ট্য:সীমান্তবর্তী, অ্যাডভেঞ্চার ট্রিপের জন্য
- অবস্থান: বান্দরবান সীমান্তবর্তী এলাকা, কক্সবাজারের কাছাকাছি
- যাওয়ার উপায়: টেকনাফ/নাইকোংছড়ি থেকে স্থানীয় গাইড নিয়ে ট্রেক করে যেতে হয়
টেকনাফ ফায়ারিং রেঞ্জ | পাহাড়ি রোড ও সীমান্তের অপার সৌন্দর্য |