ঢাকা থেকে কক্সবাজার সরাসরি ট্রেনে যাওয়ার স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হয়েছে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন’ চালুর মাধ্যমে। সমুদ্র প্রেমী পর্যটকদের জন্য এটি এক নতুন সুযোগ—আরামদায়ক, নিরাপদ এবং সময়সাশ্রয়ী ভ্রমণের নিশ্চয়তা।
যারা বারবার ভেবে থাকেন, “বাসের ঝক্কি না নিয়ে যদি ট্রেনে যাওয়া যেত!”—এই ট্রেন ঠিক তাদের জন্য। তবে এই নতুন অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে হলে আগে থেকেই কিছু দরকারি তথ্য জানা জরুরি। এই পোস্টে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের সিট প্ল্যান, ভাড়া, কোথায় কোথায় থামে, কেবিন সুবিধা, টিকিট সংগ্রহের নিয়ম, সাপ্তাহিক বন্ধ দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়। তাই ভ্রমণের আগে চোখ বুলিয়ে নিন পুরো গাইডটি, যাতে আপনার কক্সবাজার ট্রেন যাত্রা হয় ঝামেলাহীন ও উপভোগ্য।
কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন কোথা থেকে চালু হয়েছে?
এই ট্রেনটি ঢাকা (কমলাপুর) থেকে কক্সবাজার রুটে নিয়মিত চলাচল করে।
কক্সবাজার এক্সপ্রেস কোথায় কোথায় থামে?
কক্সবাজার এক্সপ্রেস থামে মোট ৯টি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে:
- কমলাপুর
- বিমানবন্দর
- চট্টগ্রাম
- পটিয়া
- দোহাজারি
- হারবাং
- চকরিয়া
- দুলাহাজরা
- ইসলামাবাদ
- কক্সবাজার
কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের সিট প্লান ও শ্রেণি বিভাগ:
কক্সবাজার এক্সপ্রেসে মোট ৬ ধরণের সিট/কেবিন সুবিধা আছে:
- শোভন চেয়ার
- এসি চেয়ার
- স্নিগ্ধা
- এসি স্নিগ্ধা
- শয়নকক্ষ (Cabin)
- অবজারভেশন কোচ (পেছনের দিক থেকে জানালার ভিউ)
প্রতিটি বগির মাঝখানে বাথরুম ও পানির ব্যবস্থা আছে।
কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট মূল্য ও ভাড়া:
কক্সবাজার এক্সপ্রেসের টিকিট ভাড়া নিম্নরূপ:
শ্রেণি | টিকিট মূল্য (প্রায়) |
---|---|
শোভন চেয়ার | ৫৫০ টাকা |
এসি চেয়ার | ৯০০ টাকা |
স্নিগ্ধা | ১১০০ টাকা |
এসি স্নিগ্ধা | ১২০০ টাকা |
শয়নকক্ষ (Cabin) | ১৫০০-১৮০০ টাকা (যাত্রার সময় ও কেবিনের ওপর নির্ভর করে) |
অবজারভেশন কোচ | ১৩০০ টাকা |
নোট: টিকিটের দাম নির্ভর করবে যাত্রার তারিখ, শ্রেণি এবং সিটের প্রাপ্যতার উপর। ছুটির সময় অথবা পিক সিজনে ভাড়া কিছুটা বাড়তে পারে।
কক্সবাজার এক্সপ্রেস কেবিন – আরামের সফর
যারা আরামপ্রিয় এবং প্রাইভেসি চান, তাদের জন্য শয়নকক্ষ কেবিন (Sleeping Cabin) দারুণ অপশন। বিশেষ করে পরিবার বা দম্পতিরা খুব উপভোগ করবেন।
কেবিনের বৈশিষ্ট্য
- প্রতিটি কেবিনে ২টি সিঙ্গেল বেড থাকে (একটি নিচে, একটি ওপরে)
- আছে লাইট, ফ্যান, স্লাইডিং দরজা ও নিরাপদ লক
- পর্দা ও কুশনযুক্ত বেডিং থাকে
- ব্যাগ রাখার জন্য আলাদা জায়গা
- কিছু কেবিনে ছোট্ট সিংক বা ওয়াশ বেসিনও থাকে
- নারীদের জন্য নিরাপদ ও ব্যক্তিগত স্পেস
কাদের জন্য ভালো
- পরিবার নিয়ে ভ্রমণ
- নবদম্পতি বা দম্পতিরা
- রাতের ট্রিপে ঘুমিয়ে যেতে চান যারা
কেবিনের ভাড়া
- সাধারণত প্রতি কেবিনের ভাড়া ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা (২ জনের জন্য)
- ভাড়ার মধ্যে শয্যা ব্যবহার ও কম্বল/বালিশ অন্তর্ভুক্ত
টিকিট কিভাবে পাবেন
- অনলাইনে: eticket.railway.gov.bd
- রেল স্টেশনে গিয়ে
- রেলওয়ে অ্যাপ থেকেও বুকিং করা যায়
কক্সবাজার এক্সপ্রেস সাপ্তাহিক বন্ধ
বুধবার — ট্রেনটি সাপ্তাহিক ছুটিতে থাকে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (FAQs)
১. কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন কোথা থেকে ছাড়ে?
ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছাড়ে এবং কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছায়।
২. কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন কোথায় কোথায় থামে?
ট্রেনটি মোট ৯টি স্টেশনে থামে, যেমন:
কমলাপুর, বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম, পটিয়া, দোহাজারি, হারবাং, চকরিয়া, দুলাহাজরা, ইসলামাবাদ এবং কক্সবাজার।
৩. কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে কেমন কেবিন পাওয়া যায়?
ট্রেনে শয়নকক্ষ কেবিন থাকে যেখানে ২ জনের জন্য বেড, আলো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইত্যাদি রয়েছে। এটা পরিবার ও দম্পতিদের জন্য খুবই আরামদায়ক।
৪. কক্সবাজার এক্সপ্রেসের টিকিট মূল্য কত?
নিচে জনপ্রিয় শ্রেণিগুলোর ভাড়া (প্রায়):
শ্রেণি | ভাড়া |
---|---|
শোভন চেয়ার | ৫৫০ টাকা |
এসি চেয়ার | ৯০০ টাকা |
স্নিগ্ধা | ১১০০ টাকা |
এসি স্নিগ্ধা | ১২০০ টাকা |
শয়নকক্ষ কেবিন | ১৫০০–১৮০০ টাকা |
অবজারভেশন কোচ | ১৩০০ টাকা |
৫. কক্সবাজার এক্সপ্রেসের টিকিট কোথা থেকে কেনা যায়?
- অনলাইনে: eticket.railway.gov.bd
- রেল স্টেশন কাউন্টার
- রেলওয়ে অ্যাপ
৬. কক্সবাজার এক্সপ্রেস সপ্তাহে কয়দিন চলে?
ট্রেনটি সপ্তাহে ৬ দিন চলে। বুধবার সাপ্তাহিক ছুটি।
৭. কক্সবাজার এক্সপ্রেসে অনলাইনে কেবিন বুক করা যায়?
হ্যাঁ, অনলাইন সিস্টেমে কেবিন সিলেক্ট করা যায়, তবে আগে বুকিং করলে ভালো সিট পাওয়া যায়।
৮. ট্রেনে খাবার পাওয়া যায় কি?
হ্যাঁ, ট্রেনে ফুড সার্ভিস থাকে। চা-কফি, স্ন্যাকস, ও লাঞ্চ/ডিনার পাওয়া যায় (অগ্রিম অর্ডার দিলে সুবিধা হয়)।
৯. কক্সবাজার এক্সপ্রেসে যাত্রা কত ঘণ্টা লাগে?
ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে সময় লাগে প্রায় ১০–১২ ঘণ্টা, ট্রাফিক ও স্টপেজ অনুযায়ী।
১০. পরিবারের সাথে ট্রেনে ভ্রমণ নিরাপদ কি?
হ্যাঁ, ট্রেনে নিরাপত্তা, পর্যাপ্ত আলো, কেবিন ও পরিচ্ছন্ন বাথরুম রয়েছে, যা পরিবার নিয়ে ভ্রমণের জন্য একেবারে উপযুক্ত।
বাড়তি কিছু টিপস:
- আগে থেকে টিকিট বুক করে ফেলুন, বিশেষত ছুটির দিনে।
- কেবিনে ভ্রমণ করলে নিরাপত্তার জন্য দরজার লক চেক করে নিন।
- ভোরে ট্রেন ছাড়ে, তাই সময় মতো স্টেশনে পৌঁছান।
- ছিনতাই বা অসতর্কতা এড়াতে ব্যাগে তালা ব্যবহার করুন।
এই ছিলো কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের পুরো গাইড! আপনি যদি আরামদায়ক ও সুন্দর ভ্রমণ চান, তাহলে একবার ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার ঘুরে আসুন।
আর হ্যাঁ, ট্রেনে জানালার পাশে বসে সমুদ্রপারের স্বপ্ন দেখতে ভুলবেন না
ঢাকা থেকে কক্সবাজার সম্পর্কিত আরও তথ্য
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেন ভাড়া কত
- ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেন টিকেট কাটার নিয়ম
- ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচী
- কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন
- কক্সবাজার এক্সপ্রেস সম্পর্কে ভাড়া, সিট প্লানসহ বিস্তারিত
- কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার বাস ভাড়া কত
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া কত
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার কত কিলোমিটার