ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেনের টিকেট কাটার প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং সোজা। আপনি যেকোনো মাধ্যম ব্যবহার করে ট্রেনের টিকেট কিনতে পারবেন, যেমন কাউন্টার থেকে, অনলাইনে, অথবা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে। নিচে টিকেট কাটার ৩টি মাধ্যম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
ক. কাউন্টার থেকে টিকেট কাটার নিয়ম
- ধাপ ১: ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন (কমলাপুর) বা অন্য কোনো উপযুক্ত স্টেশন থেকে কাউন্টার সার্ভিসের মাধ্যমে টিকেট সংগ্রহ করতে পারেন।
- ধাপ ২: আপনার যাত্রার তারিখ এবং সময় অনুযায়ী কাউন্টারে গিয়ে ট্রেনের নাম এবং আসন শ্রেণী (যেমন: এসি চেয়ার, স্নিগ্ধা, বা সি চেয়ারের জন্য) জানান।
- ধাপ ৩: টিকেটের ভাড়া পরিশোধ করে টিকেট সংগ্রহ করুন।
- ধাপ ৪: স্টেশন থেকে টিকেটের একটি কপি এবং রিটার্ন পলিসি (যদি থাকে) সংগ্রহ করুন।
ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেনের টিকেট অনলাইনে দুইভাবে কাটা যায়। নিচে ধাপ অনুযায়ী বর্ণনা করা হল।
খ. ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকিট কাটার নিয়ম

ধাপ ১. ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন:
- প্রথমে বাংলাদেশ রেলওয়ে এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান: https://eticket.railway.gov.bd/
ধাপ ২. লগ ইন বা রেজিস্টার করুন:
- যদি আপনার আগেই অ্যাকাউন্ট থাকে, তবে লগ ইন করুন। নতুন হলে, নাম, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি দিয়ে রেজিস্টার করুন।
ধাপ ৩. ট্রেনের রুট নির্বাচন করুন:
- যাত্রার স্থান: ঢাকা
- গন্তব্য স্থান: কক্সবাজার
- যাত্রার তারিখ: আপনার যাত্রার তারিখ সিলেক্ট করুন।
- ট্রেনের ধরন: পছন্দসই ট্রেন (পারজোটাক এক্সপ্রেস বা কক্সবাজার এক্সপ্রেস) সিলেক্ট করুন।
ধাপ ৪. আসন শ্রেণী নির্বাচন করুন:
- স্নিগ্ধা (Snigdha), সি চেয়ারে (S_Chair), এসি চেয়ার (AC_Chair) বা অন্য কোনো শ্রেণী বেছে নিন।
ধাপ ৫. যাত্রী তথ্য পূরণ করুন:
- নাম, বয়স, জাতীয়তা ইত্যাদি পূরণ করুন।
ধাপ ৬. পেমেন্ট করুন:
- পেমেন্টের জন্য ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড বা নেট ব্যাংকিং সিলেক্ট করুন। এছাড়াও বিকাশ বা এমপে পেমেন্ট সিস্টেমও সাপোর্ট থাকে।
ধাপ ৮. কনফার্মেশন ও ই-টিকিট:
- পেমেন্ট সফল হলে ই-টিকিট পাবেন, যা আপনার ইমেইল বা মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে।
ধাপ ৯. টিকিট প্রিন্ট করুন:
- আপনি ই-টিকিটটি প্রিন্ট করে নিতে পারেন অথবা মোবাইলে রেখে যাত্রা করতে পারবেন।
গ. মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটার নিয়ম
ধাপ ১. অ্যাপ ডাউনলোড করুন:
- Google Play Store বা Apple App Store থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
ধাপ ২. অ্যাপ খুলুন এবং লগ ইন করুন:
- অ্যাপ খুললে, যদি আপনি নতুন ব্যবহারকারী হন তবে রেজিস্টার করুন। আর যদি পুরোনো ব্যবহারকারী হন, তবে লগ ইন করুন।
ধাপ ৩. রুট নির্বাচন করুন:
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার এবং যাত্রার তারিখ নির্বাচন করুন।
- ট্রেন নির্বাচন করুন (পারজোটাক এক্সপ্রেস বা কক্সবাজার এক্সপ্রেস)।
ধাপ ৪. আসন শ্রেণী নির্বাচন করুন:
- যাত্রীদের জন্য উপলব্ধ বিভিন্ন আসন শ্রেণী যেমন স্নিগ্ধা, সি চেয়ারে, এসি চেয়ার ইত্যাদি সিলেক্ট করুন।
ধাপ ৫. যাত্রী তথ্য পূরণ করুন:
- যাত্রীদের তথ্য যেমন নাম, বয়স ইত্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করুন।
ধাপ ৬. পেমেন্ট সম্পন্ন করুন:
- আপনি পছন্দমত পেমেন্ট অপশন নির্বাচন করুন, যেমন ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, নেট ব্যাংকিং, বিকাশ, এমপে ইত্যাদি।
ধাপ ৭. ই-টিকিট কনফার্মেশন:
- পেমেন্ট সফল হলে, ই-টিকিট আপনার মোবাইলে অথবা ইমেইলে পাঠানো হবে।
ধাপ ৮. টিকিট দেখুন:
- ই-টিকিট আপনার মোবাইলে দেখা যাবে অথবা আপনি চাইলে এটি প্রিন্ট করে নিতে পারেন।
টিকিটের কনফার্মেশন:
- অনলাইনে টিকিট কাটলে, আপনাকে একটি ইলেকট্রনিক টিকিট (E-Ticket) পাবেন। এটি আপনার মোবাইল ফোনে বা ইমেইলে আসবে।
- কাউন্টারে টিকিট কাটলে, আপনাকে একটি পেপার টিকিট দেওয়া হবে। টিকিটে ট্রেনের নাম, যাত্রার সময়, আসন শ্রেণী, স্টেশন, এবং ভাড়া উল্লেখ থাকবে।
টিকিট বাতিল বা রিফান্ডের নিয়ম:
- গন্তব্য: ট্রেনের যাত্রার সময়ের আগে টিকেট রিফান্ড করতে হলে আপনাকে স্টেশন কাউন্টারে অথবা অনলাইনে রিফান্ড আবেদন করতে হবে।
- বাতিলের সময়সীমা: যাত্রার ২৪ ঘণ্টা আগে টিকিট বাতিল করলে সাধারণত পূর্ণ রিফান্ড পাওয়া যায়, তবে কিছু টিকিটের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট শতাংশ কাটানো হয়।
- রিফান্ড প্রক্রিয়া: রিফান্ডের জন্য নির্দিষ্ট চার্জ কাটা হতে পারে, যা রিফান্ডের পরিমাণের উপর নির্ভর করবে। সেক্ষেত্রে, যে আসন শ্রেণী আপনি নির্বাচন করেছেন, তার উপর ভিত্তি করে রিফান্ডের পরিমাণ নির্ধারণ হবে।
টিকিটের কনফার্মেশন এবং সিট নিশ্চিতকরণ:
- কনফার্ম টিকিট পাওয়ার পর, ই-টিকিট বা কাউন্টার টিকিট দুটি ক্ষেত্রে আপনার আসন নিশ্চিত হয়ে যাবে।
- তবে, যদি বিশেষ পরিস্থিতিতে আসন পূর্ণ হয়ে যায়, তবে আপনি স্ট্যান্ডবাই টিকিট পেতে পারেন।
বিশেষ সুযোগ:
- বিশেষ আসন (যদি থাকে): আপনি যদি বিশেষ যাত্রী (যেমন বৃদ্ধ, শিশু, নার্সিং মাদার) হন, তবে আপনি বিশেষ আসন পাবেন। এর জন্য আপনাকে আগে থেকে জানিয়ে দিতে হবে।
- বিভিন্ন আঞ্চলিক ভ্রমণকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা (যেমন: স্টুডেন্ট টিকিট) পাওয়া যেতে পারে, যা কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য।
টিকিটের বায়োডাটা নিশ্চিতকরণ:
- ভ্রমণের দিন: টিকিট কাটার সময় আপনার নাম, জাতীয়তা, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করা নিশ্চিত করুন। ভুল তথ্য দিলে আপনি সমস্যায় পড়তে পারেন।
টিকেটের শর্তাবলী:
- টিকেটের বৈধতা: একবার টিকেট কাটা হলে তা শুধুমাত্র আপনার নির্ধারিত যাত্রা তারিখ এবং সময়ের জন্য বৈধ থাকে।
- আসন সংরক্ষণ: টিকেট কেনার পর যদি কোন কারণে যাত্রা বাতিল করতে হয়, তবে টিকেটের শর্ত অনুযায়ী বাতিল বা পরিবর্তন করা যেতে পারে।
- ট্রেন ছাড়ার সময়: আপনাকে যাত্রার আগে স্টেশনে উপস্থিত থাকতে হবে যাতে কোনো সমস্যা না হয়।
স্টেশন ও বিরতি পয়েন্ট:
- ট্রেন ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে কিছু বিরতি স্টেশন আছে যেমন:
- ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন: যাত্রীরা এখানে ওঠানামা করতে পারেন।
- চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে যাত্রীরা বিরতি নিতে পারেন বা ট্রেনের যাত্রা সেখানে থামবে।
ট্রেনের চলাচলের সময়সূচী (পরিবর্তনশীল):
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার: ট্রেন সকাল ৬:১৫ তে ছাড়বে এবং কক্সবাজার পৌঁছাবে ৩:০০ PM এর মধ্যে।
- কক্সবাজার থেকে ঢাকা: ট্রেন রাত ৮:০০ তে কক্সবাজার থেকে ছাড়বে এবং সকাল ৪:৩০ PM-এ ঢাকা পৌঁছাবে।
সাপ্তাহিক ছুটি:
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার: রবিবার ছুটি থাকে, এর মানে হল যে, রবিবারে ট্রেন ঢাকা থেকে যাত্রা করবে না।
- কক্সবাজার থেকে ঢাকা: মঙ্গলবার ছুটি থাকে, অর্থাৎ মঙ্গলবার কক্সবাজার থেকে ট্রেন ছাড়বে না।
অতিরিক্ত সুবিধা ও সেবা:
- ট্রেনের ভিতরে আরামদায়ক সেবা যেমন খাবার, টিভি/এন্টারটেইনমেন্ট সুবিধা (যদিও সব ট্রেনে এটি উপলব্ধ নাও হতে পারে)।
- কিছু ট্রেনে পোর্টেবল চার্জিং পোর্ট (USB চার্জার) সুবিধা দেওয়া হয়, যাতে যাত্রীরা তাদের মোবাইল ফোন চার্জ করতে পারেন।
- ভ্রমণের সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে, বিশেষ করে পর্যটক ট্রেনগুলির জন্য।
জরুরি যোগাযোগের নম্বর:
- যদি ট্রেনের সময়সূচী বা টিকিট সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হয়, তবে বাংলাদেশের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের জরুরি যোগাযোগ নম্বর রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে যাত্রীরা তাদের সমস্যার সমাধান পেতে পারেন।
প্রশ্নোত্তর
টিকিট কাটার জন্য কি কোনো রেজিস্ট্রেশন করতে হবে?
হ্যাঁ, টিকিট কাটার আগে আপনাকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। তবে যদি আপনার আগেই অ্যাকাউন্ট থাকে, তাহলে সরাসরি লগ ইন করতে পারেন।
মোবাইল অ্যাপ দিয়ে কি টিকিট কাটতে পারবো?
হ্যাঁ, আপনি বাংলাদেশ রেলওয়ে এর অফিসিয়াল মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে সহজেই টিকিট কাটতে পারবেন। অ্যাপ থেকে পেমেন্ট করে ই-টিকিট পাবেন।
ট্রেনের আসন শ্রেণী কী কী?
ট্রেনের আসন শ্রেণী সাধারণত সি চেয়ারে (S_Chair), স্নিগ্ধা (Snigdha), এসি চেয়ার (AC_Chair) সহ বিভিন্ন ধরণের থাকে।
ট্রেনের টিকিট কাটা কি সময়সীমার মধ্যে করতে হবে?
সাধারণত, ট্রেনের টিকিট ৩ দিন আগে কাটা উত্তম, তবে আপনি ট্রেনের টিকিট আগেই কাটলে সুবিধা পাবেন।
অনলাইনে টিকিট কাটার জন্য কোন পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করা যায়?
আপনি ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, নেট ব্যাংকিং, বিকাশ, এমপে ইত্যাদি পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবেন।
যদি টিকিট ক্যানসেল করতে চাই?
যদি আপনি টিকিট ক্যানসেল করতে চান, তাহলে বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপ থেকে ক্যানসেলেশন করতে পারবেন। তবে ক্যানসেলেশন ফি প্রযোজ্য থাকতে পারে।
ট্রেনের যাত্রা কি কখনও বাতিল হয়?
হ্যাঁ, আবহাওয়া বা অন্য কোনো কারণে ট্রেনের সময়সূচী পরিবর্তন হতে পারে অথবা যাত্রা বাতিল হতে পারে। তবে সাধারণত, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে আপনাকে আগেই জানিয়ে দেয়।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম খুবই সহজ। আপনি যেকোনো মাধ্যম থেকে টিকেট কিনতে পারবেন এবং এটি একটি সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক ভ্রমণ উপায়। আশা করি এই গাইডটি আপনাকে সহজে ট্রেন টিকেট কাটতে সাহায্য করবে।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার সম্পর্কিত আরও তথ্য
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেন ভাড়া কত
- ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেন টিকেট কাটার নিয়ম
- ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচী
- কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন
- কক্সবাজার এক্সপ্রেস সম্পর্কে ভাড়া, সিট প্লানসহ বিস্তারিত
- কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার বাস ভাড়া কত
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া কত
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার কত কিলোমিটার