
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এক বিস্ময়কর সৌন্দর্য—কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। একটানা ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই প্রাকৃতিক বালুকাময় সৈকত শুধু বাংলাদেশের গর্ব নয়, এটি পুরো বিশ্বের পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণের নাম।
প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে সূর্যাস্ত দেখতে, সাগরের গর্জন শুনতে এবং জীবনের ব্যস্ততা থেকে মুক্তি নিতে। শুধু প্রকৃতি নয়, বিখ্যাত এই জায়গাটি একটি সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন, একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র এবং একটি পর্যটন শিল্পের প্রাণকেন্দ্র।
শুরু হয়েছে উত্তর বদরমোকাম থেকে এবং দক্ষিণে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম অখণ্ডিত বালুকাময় সমুদ্র সৈকতও বটে। ওয়ার্ল্ডঅ্যাটলাস ডট কম এবং এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনুযায়ী, এটি ব্রাজিলের প্রাইয়া দো কাসিনো এবং অস্ট্রেলিয়ার নাইনটি মাইল সৈকতের পর বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত।
কক্সবাজার এখন শুধু একটা ভ্রমণের জায়গা নয়—এটা হয়ে উঠেছে একটা অনুভূতি।
পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সৈকত
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক বালুকাময় সৈকত। এটি বালুকাময় হওয়ায় হাঁটা বা দৌড়ানো একেবারে নিরাপদ এবং আরামদায়ক।
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ১২০ কিলোমিটার
- প্রস্থ: ভাটার সময় ২০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত
- বালি: সোনালি, মসৃণ, সূর্যের আলোয় ঝলমল
- প্রাকৃতিক দৃশ্য: সমুদ্রের ঢেউ, নীল আকাশ, সবুজ পাহাড়
কক্সবাজার সৈকত শুধু দৈর্ঘ্যের কারণে নয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেও বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।
বিশ্বে অন্যান্য দীর্ঘ সৈকত যেমন:
- Praia do Cassino (Brazil) – ২৫৪ কিমি
- Ninety Mile Beach (Australia) – ১৪৫ কিমি
- Padre Island (USA) – ১১৩ কিমি
তবে তাদের অনেকটাই কৃত্রিমভাবে বাড়ানো, আর কক্সবাজার পুরোপুরি প্রাকৃতিক। এখানকার বালু সূক্ষ্ম, ঝকঝকে এবং নরম। ঢেউ ধীরে ধীরে আসে, এবং তা পর্যটকদের জন্য নিরাপদও।
সমুদ্র সৈকতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
- সমুদ্র সৈকতটি পুরোপুরি বালুকাময়; কাদামাটি বা কাঁদার অস্তিত্ব নেই।
- সৈকতের সঙ্গে সংলগ্ন বালিয়াড়ি, শামুক-ঝিনুক, প্রবালসহ নানা সামুদ্রিক প্রাণীর বিপণিবিতান রয়েছে।
- অত্যাধুনিক হোটেল-মোটেল-কটেজ, বার্মিজ মার্কেট, ঝিনুক মার্কেট পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।
- চার ঋতুতে সৈকতের রূপ পরিবর্তন হয়। প্রতিদিনের বিভিন্ন সময়েও সৈকত ভিন্ন সৌন্দর্য প্রদর্শন করে।
- ভরা জোয়ারে সৈকতের প্রস্থ প্রায় ২০০ মিটার (৬৬০ ফুট) এবং নিম্ন জোয়ারে প্রায় ৪০০ মিটার (১,৩০০ ফুট)।
কক্সবাজারের ভূগোল এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য
কক্সবাজার জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। এর পশ্চিমে বিশাল বঙ্গোপসাগর, পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম, উত্তরে চট্টগ্রাম জেলা এবং দক্ষিণে টেকনাফ ও মিয়ানমারের সীমান্ত। কক্সবাজার সী বিচ পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় একদিকে রয়েছে সবুজ বন, অন্যদিকে নীল সমুদ্র। দুইয়ের মিলন এই এলাকাকে দিয়েছে এক অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
কক্সবাজার শহর চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৫২ কিমি দক্ষিণে এবং ঢাকা থেকে প্রায় ৪১৪ কিমি দূরে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র এবং দেশের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর স্থান হিসেবে বিবেচিত।
আবহাওয়া:
- কক্সবাজারে সামুদ্রিক জলবায়ু বিরাজমান।
- গড় তাপমাত্রা ২৬-৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
- বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের মাত্রা বেশি, যা সৈকতের সৌন্দর্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
- শীতকালে সমুদ্র শান্ত এবং আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকে।
প্রাকৃতিক উপাদান:
- প্রবাল, শামুক, ঝিনুকের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী এখানে দেখা যায়।
- বালুকাময় প্রান্তর এবং প্রবাল পাথরের সমাহার সৈকতের আকর্ষণ বাড়িয়েছে।
বাঁকখালী নদী
শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত বাঁকখালী নদী কক্সবাজারের মৎস্য শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নদীর তীরে মৎস্য ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম এবং নৌকাগুলোর আনাগোনা একটি ব্যস্ত দৃশ্য উপস্থাপন করে।
কক্সবাজারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
কক্সবাজারের ইতিহাস দীর্ঘ ও বৈচিত্র্যময়। নবম শতাব্দী থেকে ১৬১৬ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের একটি বড় অংশ আরাকান রাজ্যের অধীনে ছিল। মুঘল সম্রাট শাহ সুজা আরাকান যাওয়ার পথে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানে ক্যাম্প স্থাপনের নির্দেশ দেন, যার ফলস্বরূপ ডুলাহাজারা নামের উৎপত্তি হয়।
পরবর্তীতে মুঘলদের শাসন শেষ হলে ত্রিপুরা, আরাকান, পর্তুগিজ এবং ব্রিটিশরা পর্যায়ক্রমে এলাকা শাসন করে। কক্সবাজারের নামকরণ হয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামানুসারে, যিনি স্থানীয় রাখাইন এবং আরাকান শরণার্থীদের মধ্যে সংঘাত নিরসন এবং পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই জায়গাটি তখন একটি শরণার্থী পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৭৯৯ সালে তার মৃত্যু হলে তার স্মরণে “কক্স সাহেবের বাজার” প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরবর্তীতে কক্সবাজার নামে পরিচিতি লাভ করে। কক্সবাজার থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৪ সালে এবং পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে, যা আজকের আধুনিক কক্সবাজারের ভিত্তি স্থাপন করে।
তবে এর আগেও এই অঞ্চল ইতিহাসের পাতায় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আরাকান রাজাদের আমলে এটি ছিল একটি ব্যবসাকেন্দ্র, যেখানে চীন, আরব ও মোগল ব্যবসায়ীরা আসতেন।
পরে পাকিস্তান আমলে এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক ও সামাজিক হাব।
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের ঋতু ও সময়ভিত্তিক সৌন্দর্য
বছরের চার ঋতুতে কক্সবাজার চার রকমের চেহারা বা রুপ দেখা যায়—
শীতকাল (নভেম্বর – ফেব্রুয়ারি):
- পর্যটকদের ভিড় সবচেয়ে বেশি এই সময়ে।
- আবহাওয়া থাকে ঠান্ডা ও মনোরম।
- সূর্যাস্তের রঙ হয় একেবারে কমলা-সোনালি।
- স্বচ্ছ পানি, ঠাণ্ডা বাতাস, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মেলা।
- পর্যটকের ভিড়, ক্যাম্পফায়ার আর কক্সবাজার ফেস্টিভ্যাল।
- সৈকতে বসে ঘোড়ায় চড়া, বেলুন উড়ানো, খাবার খাওয়া—সবই উপভোগ্য।
গ্রীষ্মকাল (মার্চ – মে):
- গরম থাকে, তবে সূর্যের আলোতে সমুদ্র হয় চকচকে।
- পরিষ্কার নীল জল, তীব্র সূর্য, বালির ঝলমলানি।
- সাঁতার কাটা, সানবাথ আর বিচ ভলিবলের সময়।
- ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ সময়।
- তুলনামূলকভাবে কম পর্যটক থাকায় শান্তিপূর্ণ।
বর্ষাকাল (জুন – আগস্ট):
- ঢেউ থাকে বিশাল আকৃতির।
- কিছুটা বিপজ্জনক হলেও রোমাঞ্চপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয়।
- ঝড়-বৃষ্টি, ঢেউয়ের তাণ্ডব ও মেঘে ঢাকা আকাশ এক ভিন্ন সৌন্দর্য এনে দেয়।
- রোমাঞ্চকর আবহাওয়া, ছবির মতো দৃশ্য।
শরৎ ও হেমন্তকাল (সেপ্টেম্বর – অক্টোবর):
- বর্ষার পরে পরিষ্কার আকাশ ও শান্ত সমুদ্র।
- সবুজ পাহাড় আবার সতেজ হয়ে ওঠে।
- ভ্রমণের জন্য সময়টা নিরপেক্ষ ও আরামদায়ক।
সৈকতের প্রাণ: মার্কেট, মেলা ও পর্যটনের কেন্দ্র
কক্সবাজার শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, এটি একটি জীবন্ত শহর, যেখানে সমুদ্রের সঙ্গে মিশে আছে মানুষের জীবনধারা, বাণিজ্য আর বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি। সৈকত ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মার্কেট, মেলা এবং পর্যটন কার্যক্রম, যা কক্সবাজারের প্রাণবন্ততার প্রতীক।
লাবনী মার্কেট: ঐতিহ্যের ছোঁয়া
লাবনী পয়েন্টে অবস্থিত লাবনী মার্কেট কক্সবাজারের অন্যতম জনপ্রিয় বাজার।
পণ্য সমাহার:
- শামুক, ঝিনুক এবং প্রবালের তৈরি গয়না।
- হস্তশিল্প এবং স্থানীয় কারুকার্য।
- সামুদ্রিক পণ্যের নানা সংগ্রহ।
বিশেষ আকর্ষণ:
- পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে কক্সবাজারের নিজস্ব হস্তশিল্প।
- কৌতূহলী দর্শনার্থীরা এখানে এসে কক্সবাজারের স্মারক সংগ্রহ করেন।
কলাতলী মার্কেট: পর্যটকদের কেনাকাটার স্বর্গ
কলাতলী পয়েন্টে অবস্থিত এই মার্কেট মূলত পর্যটকদের জন্য।
পোশাক ও সামগ্রী:
- সৈকত উপযোগী পোশাক, টি-শার্ট, স্যান্ডেল।
- হস্তশিল্প ও স্মারক সামগ্রী।
খাবারের বৈচিত্র্য:
- স্থানীয় খাবার, বিশেষত সামুদ্রিক মাছের আইটেম।
- বিদেশি এবং দেশি পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন ফাস্ট ফুড।
সন্ধ্যার মেলা: সাংস্কৃতিক মিলনমেলা
সন্ধ্যা নামলেই সৈকত প্রান্তরে বসে স্থানীয় মেলা।
লোকসংস্কৃতির প্রদর্শনী:
- রাখাইন নাচ, বাউল গান।
- স্থানীয় নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনা।
শিল্প ও সৃজনশীলতা:
- বাঁশ ও বেতের হস্তশিল্প প্রদর্শনী।
- সামুদ্রিক ঝিনুক দিয়ে তৈরি শিল্পকর্ম।
সৈকতভিত্তিক কার্যক্রম:
কক্সবাজারে শুধু সৈকতের সৌন্দর্য নয়, নানা ধরনের রোমাঞ্চকর কার্যক্রমও জনপ্রিয়।
বিচ বাইক:
- সৈকতের বালুর ওপর বাইক চালানোর মজা।
- তরুণ ও ক্রীড়াপ্রেমীদের ভিড়।
ঘোড়ার পিঠে চড়া:
- সৈকতের বিশেষ আকর্ষণ।
- প্রথাগত আরাকানি সাজে সজ্জিত ঘোড়াগুলো পর্যটকদের আনন্দ দেয়।
প্যারাসেইলিং:
- আকাশে উড়ে সৈকতের অপূর্ব দৃশ্য দেখা।
- ভ্রমণপিপাসুদের জন্য রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
মেলা:
- বিশেষ দিন যেমন পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস, বা পর্যটন সপ্তাহে সৈকতের ধারে বসে রঙিন মেলা।
- মেলাতে শিশুদের জন্য খেলাধুলা, স্থানীয় খাবারের স্টল, এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
সোজা কথায়, সৈকতটা কেবল জায়গা না, একটা জীবন্ত অনুভূতি।
নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্যে ঘেরা কক্সবাজার
কক্সবাজার অঞ্চলে শুধু বাঙালিরাই থাকেন না—এখানে রয়েছে নানা আদিবাসী সম্প্রদায় ও আন্তর্জাতিক শরণার্থী গোষ্ঠী। এ বৈচিত্র্যই এলাকাটিকে করেছে অনন্য।
রাখাইন সম্প্রদায়:
- কক্সবাজার ও রামুতে এদের সংখ্যা অনেক।
- এদের নিজস্ব ভাষা, পোশাক, সংস্কৃতি ও ধর্মাচার রয়েছে।
- রাখাইনদের তৈরি “হস্তশিল্প”, বিশেষ করে তাঁতের কাপড় এবং কাঠের কারুকাজ বেশ বিখ্যাত।
আদিবাসী সংস্কৃতি:
- চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ও কাছাকাছি এলাকায় বাস করে।
- তারা বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন করে স্থানীয়দের সঙ্গে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী:
- কক্সবাজার এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের স্থান।
- এদের আগমন কক্সবাজারের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও সমাজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছে।
এই সব মিশ্র সংস্কৃতি কক্সবাজারকে দিয়েছে এক বিশ্বজনীন রঙিন চেহারা।
সপ্তাশ্চার্যের দৌড়ে কক্সবাজার
২০১০ সালে “New 7 Wonders of Nature” প্রতিযোগিতায় কক্সবাজারকে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। লক্ষ ছিল: বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে তুলে ধরা।
কেন মনে করা হয়েছিল কক্সবাজার যোগ্য?
- এটি বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক বালুকাময় সৈকত।
- সৈকতের সৌন্দর্য চার ঋতুতে বদলায়।
- রয়েছে পাহাড়, বন, ঝরনা, আর সমুদ্র একসঙ্গে।
প্রচারণা:
- সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়।
- দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে খবর ছাপা হয়।
- অনেকেই ভোট দিয়েছেন ওয়েবসাইটে গিয়ে।
দুর্ভাগ্যবশত, চূড়ান্ত তালিকায় কক্সবাজার জায়গা করে নিতে পারেনি, কিন্তু এই প্রচারণার মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ ও কক্সবাজার পরিচিতি পেয়েছে আরও গভীরভাবে।
ধর্মীয় উৎসব আর সমুদ্র সৈকতের অসাম্প্রদায়িক মিলনমেলা
কক্সবাজার হলো এক অসাম্প্রদায়িক সৌন্দর্যের জায়গা, যেখানে ধর্মীয় ভিন্নতা কোনো বিভাজন তৈরি করে না—বরং একসঙ্গে মিশে যায় সংস্কৃতির জোয়ারে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের উৎসব:
- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় সৈকতে থাকে লাখো পর্যটকের ভিড়।
- স্থানীয় মসজিদ ও দরগাগুলো সাজে আলোকসজ্জায়।
হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা:
- দুর্গাপূজা ও সরস্বতী পূজার সময় কক্সবাজার শহর এবং আশেপাশের মন্দিরগুলো সাজে ধর্মীয় উৎসবে।
- হিমছড়ি বা ইনানীর পাশে থাকা ছোট ছোট পূজামণ্ডপগুলিও চোখে পড়ে।
রাখাইনদের জলকেলি বা ‘সাংগ্রাই উৎসব’:
- বর্ষবরণের এই উৎসব খুবই জনপ্রিয়, যেখানে পানির ছিটা দিয়ে মানুষ পরস্পরের মঙ্গল কামনা করে।
এই অসাম্প্রদায়িক চেতনা কক্সবাজারকে দেয় এক সাংস্কৃতিক সহাবস্থানের প্রতীক হিসেবে পরিচিতি।
কক্সবাজারের বিভিন্ন সৈকত
লাবনী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত
লাবণী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত হলো কক্সবাজার সৈকতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রাণবন্ত অংশ। এটি কক্সবাজারের প্রধান সৈকত হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রথমবার কেউ এলে যা দেখে—তা-ই যেন সৈকতের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়ায়।
অবস্থান:
- কক্সবাজার শহরের মূল সৈকত এলাকা, হোটেল-মোটেলের কাছাকাছি।
- শহর থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী হওয়ায় সবচেয়ে বেশি পর্যটক এই পয়েন্টেই ভিড় করেন।
কেন জনপ্রিয়?
- এখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য সবচেয়ে পরিষ্কার দেখা যায়।
- ঘোড়ায় চড়া, উটের রাইড, জেট স্কি, প্যারাসেইলিংসহ অনেক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা মেলে।
আশেপাশে যা আছে:
- বার্মিজ মার্কেট, সাগরিকা মার্কেট, ছোট-বড় দোকানপাট এবং ঝিনুক মার্কেট।
- লাবণী বিচ মার্কেট থেকে সামুদ্রিক শোপিস, মুক্তার গহনা কেনা যায়।
- ফাস্ট ফুড, চটপটি, নারকেল পানির দোকান, ফটো বুথ—সবকিছু হাতের নাগালে।
লাবণী পয়েন্টে এক বিকেল মানে—সমুদ্রের হাওয়া, পায়ের নিচে নরম বালি, আর জীবন থেকে পালিয়ে আসা একটুখানি শান্তি।
সুগন্ধা পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত

লাবনী পয়েন্টের উত্তরে অবস্থিত অন্যতম জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত হলো সুগন্ধা বিচ।
অবস্থান:
লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টের মাঝামাঝি, শহরের খুব কাছেই।
সৌন্দর্যের বৈশিষ্ট্য:
- সুগন্ধা পয়েন্টের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এখানকার প্রাণবন্ত পরিবেশ।
- সমুদ্রের ঢেউ বেশ শক্তিশালী থাকে, ফলে তরুণরা এখানে ‘সার্ফিং’-এর অভিজ্ঞতা নিতে আসেন।
- হালকা হাওয়ার সঙ্গে নারকেল পানি হাতে বসে থাকা এক স্বর্গীয় অনুভূতি দেয়।
- বার্মিজ মার্কেট ও ঝুলন্ত রেস্টুরেন্টের জন্য বিখ্যাত।
আশেপাশে কী পাবেন?
- পপুলার ফুড কোর্ট, বার্মিজ খাবারের দোকান, নারকেল পানি, ঝিনুক, হস্তশিল্প বিক্রির দারুণ সব স্টল।
- টুকটাক বসার জায়গা, ছাতা-চেয়ার ভাড়া নেওয়ার ব্যবস্থা আছে।
- অতীতে এখানে সামুদ্রিক মাছের রেস্তোরাঁ ছিল যা সরকার উচ্ছেদ করে।
ট্যুরিস্টদের পছন্দ:
যারা ফটোশুট করতে চান—বিশেষ করে প্রি-ওয়েডিং, ইনফ্লুয়েন্সাররা, কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট ক্রিয়েটররা—তাদের জন্য দারুণ লোকেশন।
কলাতলী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত

কলাতলী পয়েন্টে অবস্থিত কক্সবাজার শহরের আরেকটি জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত যা কলাতলী বীচ নামে পরিচিত।
অবস্থান:
লাবণী পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে মাত্র ১০-১২ মিনিটের হাঁটার পথেই কলাতলী পয়েন্ট। এটি মূলত কক্সবাজার শহরের পর্যটন হোটেল জোনের মাঝখানে পড়েছে।
কেন জনপ্রিয়?
- সৈকতটা অপেক্ষাকৃত প্রশান্ত। ভিড় তুলনামূলকভাবে কম, তাই পরিবার বা দম্পতিদের জন্য আদর্শ জায়গা।
- সূর্যাস্ত দেখার জন্য এখানে বসে থাকার আলাদা একটা শান্তি আছে।
- চাঁদনি রাতে সৈকতের দর্শনীয় সৌন্দর্য ।
- সমুদ্রস্নান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য জনপ্রিয়।
আশেপাশের সুবিধা:
- হোটেল সী-গাল, হোটেল দ্যা কক্স টুডে, সায়মন বিচ রিসোর্ট—সবই এই পয়েন্টের কাছে।
- জোনাল রেস্টুরেন্ট, বার্গার ও ফাস্টফুড দোকান, আর হস্তশিল্প বিক্রির স্টল সহজেই পাওয়া যায়।
বিশেষ দিক:
কলাতলী পয়েন্টে রয়েছে রিসোর্ট ফিলিং, যেখানে আপনি চাইলে হোটেল থেকে বের হয়েই বালিতে পা রাখতে পারবেন। এটি অনেক পর্যটকের পছন্দের জায়গা।
হিমছড়ি সৈকত
কক্সবাজার থেকে প্রায় ১২ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত। কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে হিমছড়িতে যাওয়ার পথটি মনোরম।
কী আছে এখানে?
- পাহাড়, ঝরনা, আর সমুদ্র—এই তিনের মিশেলে তৈরি কক্সবাজারের এক অনন্য গন্তব্য হলো হিমছড়ি।
- এটি শহর থেকে প্রায় ১২ কিমি দূরে, কলাতলী পয়েন্ট পেরিয়ে যেতে হয়।
প্রধান আকর্ষণ:
- হিমছড়ি জলপ্রপাত: বর্ষাকালে খুবই সক্রিয়। পাহাড় বেয়ে গড়িয়ে পড়া জলরাশি দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
- হিমছড়ি ভিউ পয়েন্ট: পাহাড় বেয়ে উঠলে একেবারে ওপর থেকে দেখা যায় নীল সমুদ্র ও বেলাভূমি—যা দেখে নিশ্বাস আটকে যেতে পারে।
কি করা যায়?
- হাইকিং, পিকনিক, আর ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ।
- কিছু পাহাড়ি পথ কিছুটা চড়াই হলেও ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক এক্সাইটিং অ্যাডভেঞ্চার।
পরিবেশ:
এখানে প্রকৃতি তুলনামূলকভাবে কম ব্যবহৃত, তাই শান্ত, পরিচ্ছন্ন এবং প্রাকৃতিক।
ইনানী সৈকত
অবস্থান:
কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২৫-৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে। এখানে যেতে প্রাইভেট কার বা সিএনজি অটো রিজার্ভ করতে হয়।
বৈশিষ্ট্য:
- ইনানী বিখ্যাত এর পাথুরে সৈকতের জন্য। বালুর মাঝে মাঝে ছোট-বড় পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।
- সবুজ ও কালো বর্ণের প্রবাল পাথর এই সৈকতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
- এই পাথরগুলো জোয়ারে ভেজে গিয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সূর্যের আলোয় ঝিকঝিক করে।
পানি ও ঢেউ:
- ইনানীর পানির রঙ অনেকটাই সবুজাভ-নীল। খুবই স্বচ্ছ।
- এখানে সমুদ্র তুলনামূলক শান্ত থাকে। তাই পরিবার নিয়ে ভিজতে চাইলে নিরাপদ।
ইনস্টা-পারফেক্ট:
- পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে সানসেট ক্যাপচার করার ছবি কক্সবাজারের সবচেয়ে আইকনিক ছবিগুলোর একটি।
দরিয়ানগর সৈকত
- হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের নিকটে অবস্থিত।
- জলপথের জন্য পরিচিত।
- প্যারাসেলিং এবং ট্রেকিংয়ের জন্য জনপ্রিয়।
পাটুয়ারটেক সমুদ্র সৈকত
কক্সবাজারের ভিড়ভাট্টা ও পরিচিত জায়গাগুলোর বাইরে যারা একটু নির্জন, প্রকৃতি আর সাগরের নিঃশব্দ সংলাপ খুঁজে ফিরেন—তাদের জন্য আদর্শ জায়গা হলো পাটুয়ারটেক সমুদ্র সৈকত।
অবস্থান
- এটি কলাতলী পয়েন্টের দক্ষিণে, ইনানী যাওয়ার পথে, মূল শহরের ব্যস্ততা থেকে কিছুটা দূরে।
- পাটুয়ারটেক নামটি এসেছে পাশের পাটুয়ারটেক গ্রাম থেকে।
সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য
- এখানে রয়েছে ছোট ছোট পাথুরে উপকূল, যার কারণে জোয়ারের সময় ঢেউয়ের গর্জন অন্যরকম শোনায়।
- অনেক সময় এখানে সাগরের রঙ হয় গাঢ় নীল আর আকাশের প্রতিচ্ছবি পড়ে পানিতে।
- এখানে তুলনামূলকভাবে পর্যটক কম যায়, তাই যারা সাইলেন্ট বিচ পছন্দ করেন তাদের জন্য আদর্শ।
ছবি তোলার জন্য চমৎকার
- সূর্যাস্তের সময় পাটুয়ারটেক একদম “সিনেমাটিক লোকেশন” হয়ে যায়।
- পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কিংবা বসে ছবি তোলা যায়, পেছনে ঢেউ আর সূর্যের আলো—স্বপ্নের মতো লাগে।
কিছু সতর্কতা
- কিছু জায়গা পাথুরে ও পিচ্ছিল হতে পারে, তাই হাঁটার সময় সাবধান থাকতে হয়।
- এখানে এখনো তেমন বাণিজ্যিক সুবিধা নেই, তাই খাবার বা পানির ব্যবস্থা আগে থেকেই করে নিতে হয়।
কেন যাবেন?
- যদি আপনি একদিনের জন্য কক্সবাজারে একটু নির্জনতা খুঁজেন,
- ভিড়ের বাইরে গিয়ে প্রকৃতি ও ঢেউয়ের একান্ত মিলন দেখতে চান,
- বা ফটোগ্রাফি ভালোবাসেন—তাহলে পাটুয়ারটেক আপনার পরবর্তী গন্তব্য হতেই পারে।
টেকনাফ সৈকত
টেকনাফ সৈকত কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত।
কক্সবাজারের শেষ সীমা:
- এটি বাংলাদেশের দক্ষিণপ্রান্তে, কক্সবাজার জেলার সবচেয়ে দক্ষিণে অবস্থিত।
- নাফ নদীর তীরে অবস্থিত এই এলাকা মায়ানমার সীমান্তঘেঁষা।
সৈকতের ধরণ:
- টেকনাফ সৈকত অনেকটাই নির্জন। কম পর্যটক আসে, তাই একান্ত সময় কাটাতে চাইলে আদর্শ।
- এখানে পানি অনেক গভীর এবং ঢেউ বড় হয়।
আশেপাশে ঘোরার জায়গা:
- সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার জাহাজ মূলত টেকনাফ থেকেই ছাড়ে।
- নাফ নদী, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, টেকনাফ বাজার ও পাহাড়ঘেরা পথগুলো বেশ দর্শনীয়।
প্রকৃতি ও প্রতিবেশ:
- এই এলাকায় এখনও গ্রামীণ সৌন্দর্য অটুট। সাদামাটা অথচ প্রাণভরে উপভোগ করা যায়।
- গাছগাছালিতে ঘেরা, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল।
- শ্যামলাপুর সৈকত, শিলাখালী সৈকত, হাজামপাড়া সৈকত প্রভৃতি উপসৈকত রয়েছে।
শ্যামলাপুর সৈকত (বাহারছড়া সৈকত)
অবস্থান:
টেকনাফ যাওয়ার পথে বাহারছড়া ইউনিয়নের শ্যামলাপুর গ্রামে অবস্থিত। ইনানী থেকে আরও দক্ষিণে প্রায় ৮ কিমি।
সৌন্দর্য:
- একেবারেই নির্জন এবং অপরিচিত সৈকত। বড় বড় ঢেউ, গভীর নীল জলরাশি আর দিগন্তজোড়া নিস্তব্ধতা—এক স্বপ্নীল পরিবেশ।
- এখানকার বালু তুলনামূলকভাবে সাদা এবং মিহি। সূর্যের আলো পড়লে চকচক করে।
কী করা যায়?
- ব্যক্তিগত পিকনিক, ফটোগ্রাফি, নেচার ট্রেইল, কিংবা শুধু নীরব সময় কাটানোর জন্য আদর্শ।
পর্যটন সতর্কতা:
পর্যটক তুলনামূলক কম আসে, তাই নিরাপত্তা ও পরিবহন ব্যবস্থা একটু সীমিত। দল বেঁধে যাওয়াই ভালো।
শিলাখালী সৈকত
অবস্থান:
উখিয়া উপজেলার উপকূলীয় একটি ছোট জনপদ শিলাখালী। এখানেও রয়েছে এক বিস্ময়কর সমুদ্রসৈকত।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
- এখানে দেখা যায় ছোট ছোট পাথুরে দ্বীপের মতো গঠন।
- আশেপাশে প্রচুর ঝাউবন, যা এক রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করে।
- শীতকালে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি।
পরিবেশ:
- তুলনামূলকভাবে বন্যপ্রাণী ও পাখির বিচরণ বেশি। বার্ডওয়াচিং বা প্রাকৃতিক গবেষণার জন্য বেশ উপযোগী।
ভ্রমণ পরামর্শ:
- স্থানীয় গাইড ছাড়া গেলে জায়গাটা পুরোপুরি উপভোগ করা সম্ভব না। স্থানীয়দের থেকে পথঘাট জেনে যাওয়াই উত্তম।
হাজামপাড়া সৈকত
কক্সবাজারের গোপন রত্ন:
- এটি কক্সবাজার সদরের পাশে একটি শান্ত নিরিবিলি সৈকত। খুব কম পর্যটকই এর কথা জানেন।
হাইলাইট:
- এখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত—উভয়ই দেখা যায়। আকাশে রঙের খেলা হয় ঠিক যেন ক্যানভাসে আঁকা।
- শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া ইত্যাদি খোলা চোখে দেখা যায়।
কেন যাবেন?
- যারা ভিড় এড়িয়ে নির্জনে সমুদ্র উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য এটি ‘পারফেক্ট গন্তব্য’।
- খুব ভালো লোকেশন ফটোগ্রাফি বা শর্ট ফিল্মের জন্য।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কিভাবে যাওয়া যায়
বিমানপথ:
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দর পর্যন্ত ডিরেক্ট ফ্লাইট রয়েছে। সময় লাগে মাত্র ৫০–৬০ মিনিট।
- বিমানবন্দর থেকে শহর মাত্র ১০ মিনিটের পথ।
বাসপথ:
- ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ দেশের সব বড় শহর থেকে নৈশ ও দিবসকালীন এসি/নন-এসি বাস চলে।
- কোম্পানি: হানিফ, শ্যামলী, এস.আলম, সৌদিয়া, গ্রিনলাইন ইত্যাদি।
- সময়: ঢাকা থেকে ১০–১২ ঘণ্টা।
ট্রেনপথ:
- সরাসরি ট্রেন সার্ভিস না থাকলেও চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথে এসে সেখান থেকে বাস বা মাইক্রোবাস নেয়া যায়।
নিজস্ব গাড়ি:
- ঢাকা → চট্টগ্রাম → কক্সবাজার রোড: প্রায় ৪২০ কিমি। গাড়িতে ১০-১১ ঘণ্টা লাগে।
- মাঝপথে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রামে বিরতি দেওয়া যায়।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশে থাকার হোটেল রিসোর্ট
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি কক্সবাজারে বিভিন্ন মানের হোটেলে, রিসোর্ট ও কটেজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন
বাজেট বা কম দামের হোটেল (৳৮০০–৳২০০০):
- হোটেল আল মামুন
- হোটেল সানশাইন
- লাবণী হোটেল কমপ্লেক্স (গভ. রেট)
মিড রেঞ্জ (৳২০০০–৳৫০০০):
- হোটেল লং বিচ
- হোটেল সী-প্যালেস
- হোটেল কক্স টুডে
- হোটেল মিডওয়ে ইন
- সি আল্ট্রা রিসোর্ট
বিলাসবহুল বা ৫ স্টার মানের রিসোর্ট (৳৫০০০+):
- সায়মন বিচ রিসোর্ট
- ওশান প্যারাডাইস হোটেল এন্ড রিসোর্ট
- সী পার্ল বিচ রিসোর্ট (ইনানী)
- মারমেইড ইকো রিসোর্ট
কাদের জন্য?
- ফ্যামিলি ও বড় গ্রুপ: সি-প্যালেস, মিডওয়ে ইন
- হানিমুন/কাপল: সায়েমান বা মেরমেইড
- ব্যাকপ্যাকার ও স্টুডেন্ট: লাবণী কমপ্লেক্স ও বাজেট হোটেলগুলো
পরামর্শ:
- পিক সিজনে আগেই বুকিং করে রাখা ভালো।
- কিছু রিসোর্টে অনলাইন ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কী কী খাওয়া যায়
কী কী খাওয়া যায়:
কক্সবাজার মানেই সি-ফুড হেভেন! এখানে যেসব খাবার মিস করা উচিত না—
- ঝিনুক ও শুঁটকি ভর্তা
- চিংড়ি, লবস্টার ও কাঁকড়া ভাজি
- কাটলেট ও ফিশ বল
- তাজা সামুদ্রিক মাছের ঝোল (রূপচাঁদা, লইট্টা, কোরাল)
- জলপাইয়ের আচার ও সাদা ভাত
জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট:
রেস্টুরেন্টের নাম | বিশেষত্ব |
---|---|
হান্টার রেস্তোরা | সি-ফুড + দেশি খাবার |
ঝাউবন রেস্টুরেন্ট | সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্যামিলি ডাইন |
পাহাড়িকা | গুঁড়ো মাংস, খাসির কালাভুনা |
ইয়াম্মি ইয়াম্মি | ফাস্টফুড ও চাইনিজ |
নিরব হোটেল | গরুর রেজালা, গরম ভাত, ডাল |
স্ট্রিট ফুড অপশন:
- চানাচুর-আচার মিশ্রণ
- খেজুর রসের আইসক্রিম (সিজনে)
- নুডলস-চপের ভেলপুরি টাইপ মিক্স
সতর্কতা: অচেনা স্টল থেকে কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ খাবার না খাওয়াই ভালো। বাচ্চা বা সিনিয়র সঙ্গীদের জন্য পরিচ্ছন্ন রেস্টুরেন্টই বেস্ট।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে দর্শনীয় স্থানসমূহ
আপনার ভ্রমণ হবে আরও স্মরণীয় যদি দেখেন:
রামু বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ প্রতিমা:
- বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তি এখানে।
- ঘিরে আছে শান্তি ও ঐতিহ্যের এক ছায়াঘেরা পরিবেশ।
ডালফিন মোড় (ডলফিন স্কয়ার):
- কক্সবাজার শহরের অন্যতম ফটোগ্রাফিক স্পট।
- সন্ধ্যায় আলোকসজ্জায় সাজে—সেলফি হিট!
বার্মিজ মার্কেট:
- কক্সবাজার থেকে নিয়ে আসার মতো সেরা জায়গা!
- পিতল, চামড়ার ব্যাগ, হস্তশিল্প, মশলা—সব এক জায়গায়।
কক্সবাজার একুয়ারিয়াম (প্রস্তাবিত):
- যদি খোলা থাকে, শিশু ও শিক্ষার্থীদের জন্য জ্ঞানভিত্তিক মজার অভিজ্ঞতা।
মেরিন ড্রাইভ রোড:
- ইনানী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রবক্ষ ঘেঁষে বানানো এই রাস্তা পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর কোস্টাল রোড।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নাম কী?
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, যার স্থানীয় নামও একই।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত কোথায় অবস্থিত?
এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে, চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলা শহরে অবস্থিত।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য কত?
এটি প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ—ধারাবাহিকভাবে প্রসারিত বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় সৈকত।
কক্সবাজার কি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত?
হ্যাঁ, কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ প্রাকৃতিক ও একটানা বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ কিলোমিটার। বিশ্বের অনেকে সমুদ্র সৈকত হয়তো আরও বড়, কিন্তু এভাবে একটানা প্রাকৃতিক বালুকাময় সৈকত হিসেবে কক্সবাজার এখনো অনন্য।
বিশ্বের কোনটি বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কোনটি?
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৈকতের মাপ বা পরিচয় নানা মানদণ্ডে ভিন্ন হতে পারে:
কক্সবাজার (বাংলাদেশ) – দীর্ঘতম প্রাকৃতিক বালুকাময় সৈকত
প্লায়া নোভিল্লা (ব্রাজিল) – প্রায় ২১২ কিমি, তবে সম্পূর্ণ বালুকাময় নয়
ফ্রেজার আইল্যান্ড বিচ (অস্ট্রেলিয়া) – দ্বীপভিত্তিক দীর্ঘ সৈকত
বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কোনটি?
কক্সবাজারকে এখনো “Longest Natural Sea Beach” হিসেবে বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কোথায়?
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সৈকত (বিভিন্ন মানদণ্ডে) ব্রাজিলের Praia do Cassino। দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫৪ কিমি! তবে এটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক নয়, অনেকখানি মানবসৃষ্ট উন্নয়ন রয়েছে। এর বিপরীতে, কক্সবাজার প্রাকৃতিকভাবে একটানা বালুকাময় সৈকত হিসেবে অনন্য এবং সেই কারণে এর খ্যাতি বিশ্বজোড়া।
কক্সবাজার কিসের জন্য বিখ্যাত?
কক্সবাজার প্রধানত সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও প্রাকৃতিক বালুকাময় সৈকত, হিমছড়ি ও ইনানীর পাহাড়ি দৃশ্য, বার্মিজ বাজারের ঐতিহ্যবাহী পণ্য, সামুদ্রিক খাবার, আধুনিক রিসোর্ট ও স্পা সুবিধা, সানসেট ও সানরাইজ দর্শন ইত্যাদির জন্যও বিখ্যাত!
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের গভীরতা কত?
সমুদ্র সৈকতের ঠিক “গভীরতা” বলতে আমরা বোঝায়—সমুদ্রসীমার পানির গভীরতা কত দূরত্বে কেমন হয়।
- সৈকতের প্রান্তে (পাড়ে): ১-২ মিটার
- কিছুটা ভিতরে গেলে: ৫-১০ মিটার
- গভীর সমুদ্রে (১০ কিমির মধ্যে): ৫০-৭০ মিটার পর্যন্তও হতে পারে
দ্রষ্টব্য: ভাটার সময় অনেকদূর পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া গেলেও জোয়ারের সময় হঠাৎ গভীরতা বেড়ে যায়। তাই সতর্ক থাকা জরুরি।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আয়তন কত?
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আয়তন নির্ভর করে এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের উপর:
- দৈর্ঘ্য: ১২০ কিমি
- গড় প্রস্থ: ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার (ভাটার সময় বেশি হয়)
মোট আয়তন আনুমানিক ৩৬ থেকে ৬০ বর্গকিমি এর মধ্যে।
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত শুধু একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার মিলনস্থল। এই বালুকাময় তটরেখা দেশের গর্ব এবং আন্তর্জাতিক মানচিত্রে বাংলাদেশকে পরিচিতি এন দিয়েছে।