
লাবণী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন বালুকাময় সমুদ্র সৈকত।
এর গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় অংশ হলো লাবনী বিচ বা লাবণী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত।
এটি কক্সবাজারের সবচেয়ে নিকটবর্তী, জনপ্রিয় ও পুরাতন সমুদ্র সৈকত।
তাছাড়া কক্সবাজারের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লাবণী বিচ।
বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতের কথা বললেই প্রথমে লাবনী বিচের কথা মনে আসে।
লাবণী বিচের অবস্থান
লাবণী বিচ কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, যা শহরের প্রধান বিচ হিসেবে পরিচিত।
- শহরের কেন্দ্র থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে,
- কক্সবাজার শহর থেকে রিকশা বা অটোবাইকে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ, পায়ে হেঁটেও যেতে পারবেন।
- কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রধান প্রবেশদ্বার হিসেবেও বিবেচিত।
- নৈকট্য: কলাতলী বিচ ও সুগন্ধা বিচের খুব কাছেই।
লাবণী বিচের সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য

বেলাভূমি ও সমুদ্রের ঢেউ
- আছড়ে পড়া ঢেউ বিশাল বালুকাবেলায় সুর তোলে।
- সৈকতে বসে ঢেউয়ের ছন্দে প্রশান্তি আসে।
- সাদা ফেনায় মোড়ানো ঢেউ ও কটেজগুলো নয়নাভিরাম দৃশ্য তৈরি করে।
- সৈকতে হাঁটলে প্রকৃতির কোলেই থাকার অনুভূতি হয়।
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্য
- সূর্যোদয়ের রক্তিম আভার সাথে ঢেউয়ের মিতালি মনোমুগ্ধকর।
- সূর্যাস্তের লাল-কমলা আলো সৈকতে প্রতিফলিত হয়ে মোহময় পরিবেশ তৈরি করে।
- সন্ধ্যায় বিচে সূর্যাস্ত দেখা এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
- সূর্যাস্ত দেখতে অনেক পর্যটক লাবণী বিচে ভিড় করেন।
ঝাউবন ও সবুজ ছায়া
- সৈকতের পাশে ঘন ঝাউবন, যা সূর্যের তীব্রতা থেকে রক্ষা করে আর সৈকতের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে।
- ঝাউবনের ছায়ায় বসে সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করা সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
- বিকেলে সমুদ্রের হাওয়ার সাথে ঝাউবনের পাতার মৃদু শব্দ মনে প্রশান্তি আনে।
রাত্রিকালীন সৌন্দর্য উপভোগ
- চাঁদনি রাতে সমুদ্রের ঢেউয়ে চাঁদের আলো প্রতিফলিত হয়ে অপরূপ দৃশ্য তৈরি করে।
- বিচের পাশেই কাঠের চেয়ারে বসে রাতের সমুদ্র উপভোগ করতে পারেন।
লাবণী বিচের বিনোদনমূলক কার্যক্রম
লাবণী বিচে শুধুমাত্র সমুদ্র উপভোগ নয়, বরং নানা ধরণের বিনোদনমূলক কার্যক্রমও আছে।
গোসল ও সৈকতে হাঁটা:
- সমুদ্রের পানিতে গা ভিজিয়ে ঠান্ডা অনুভব করা সত্যিই প্রশান্তিদায়ক।
- বালুকাবেলার ওপর খালি পায়ে হাঁটা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
জলক্রীড়া:
- বীচ বাইক: বালুর ওপর দিয়ে বাইক চালিয়ে এডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে পারেন।
- জেট স্কি: সমুদ্রের বুকে দ্রুতগতির জেট স্কি চালিয়ে রোমাঞ্চ উপভোগ।
- ঘোড়ায় চড়া: সৈকতে ঘোড়ার পিঠে চড়ে পুরো এলাকা ঘুরে দেখা যায়।
- স্পিডবোট: দ্রুতগতিতে সমুদ্রের ঢেউ ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা।
লাবণী বিচের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
- বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন:
- শারদীয় দুর্গাপূজার সময় লাবণী বিচে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।
- কক্সবাজার কার্নিভাল:
- প্রতি বছর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
- লাবনী বিচের প্রবেশপথে জেলা পরিষদ চত্বরে বিভিন্ন ব্যান্ডের সংগীত আয়োজন হয়
- স্পোর্ট্স:
- প্রতি বছর বিচ ফুটবল এবং বিচ ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট অনুষ্টিত হয়
- তাছাড় বছরে ঘুড়ি উৎসব প্রতিযোগিতা এখানে পালিত হয়
খাবার ও কেনাকাটা
খাবারের ব্যবস্থা:
লাবণী বিচের আশেপাশে বেশ কিছু জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ রয়েছে।
- পৌষী রেস্টুরেন্ট: দেশি ও বিদেশি খাবার।
- ঝাউবন রেস্টুরেন্ট: সামুদ্রিক খাবারের জন্য বিখ্যাত।
- রোদেলা ও নিরিবিলি রেস্টুরেন্ট: বারবিকিউ ও ফাস্টফুড।
- বারবিকিউ ফেস্ট: তাজা সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ অন্যতম আকর্ষণ।
কেনাকাটা:
- ঝিনুক মার্কেট:
- সামুদ্রিক ঝিনুক, শামুক ও নানা হস্তশিল্পের পসরা।
- এখানে পাওয়া যায় মায়ানমার ও চীনের বাহারি সামগ্রী।
- শুটকি বাজার:
- বিভিন্ন রকমের সামুদ্রিক শুটকি।
- স্মারক সামগ্রী:
- কক্সবাজারের চিত্রাঙ্কিত টি-শার্ট, ক্যাপ, ঝিনুকের গহনা।
লাবণী বিচের আবাসিক সুবিধা
কক্সবাজার শহরে থাকা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, কারণ এখানে অনেক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে।
বাজেট বা কম দামের হোটেল:
- ইকরা বিচ রিসোর্ট, উর্মি গেস্ট হাউস।
- ভাড়া: ৮০০-৩০০০ টাকা।
মিডিয়াম বাজেট:
- সী প্যালেস, হোটেল মিডিয়া, কোরাল রীফ।
- ভাড়া: ৩০০০-৬০০০ টাকা।
প্রিমিয়াম বা ৫ স্টার হোটেল:
- হোটেল দ্যা কক্স টুডে, হোটেল সী গাল।
- ভাড়া: ৬০০০-১০০০০ টাকা।
বুকিং টিপ্স
- আগে থেকেই অনলাইনে বুকিং নিশ্চিত করলে ঝামেলা এড়ানো যাবে।
- বিচের কাছের হোটেলগুলোর ভাড়া বেশি, একটু দূরে থাকলে খরচ কম।
লাবনী বিচে কীভাবে যাবেন
সড়কপথে:
- ঢাকা থেকে গ্রীন লাইন, শ্যামলী, হানিফ, সোহাগ পরিবহনে কক্সবাজার আসা যায়।
- কলাতলী মোড়ে নেমে রিকশা বা অটোবাইকে ১০-১৫ মিনিটে লাবণী বিচ।
- ভাড়া: ১০০০-২৮০০ টাকা (নির্ভর করে বাসের মান ও এসি/নন-এসি)।
বিমানপথে:
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ৫০ মিনিটের ফ্লাইট।
- বিমানবন্দর থেকে রিকশা বা সিএনজিতে মাত্র ২০ মিনিট।
- জনপ্রতি ভাড়া: ৩৫০০-১০,০০০ টাকা।
রেলপথে:
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস বা পর্যটক এক্সপ্রেসে সরাসরি যাওয়া যায়।
- কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ে।
- জনপ্রতি ভাড়া: ৫০০-১৭৫০ টাকা।
ভ্রমণ টিপস
- নিরাপদ স্নানের জন্য লাইফগার্ডের নির্দেশ মেনে চলুন।
- সূর্যাস্তের পর সমুদ্রে গোসল এড়িয়ে চলুন।
- মূল্যবান সামগ্রী ভ্রাম্যমাণ লকারে রাখুন।
- যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলবেন না।
- খাবারের দাম আগে থেকেই জেনে নিন।
- সমুদ্রের ঢেউ ও জোয়ার-ভাটা সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
লাবণী বিচের কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান
- হিমছড়ি জলপ্রপাত: লাবণী বিচ থেকে অল্প দূরেই অবস্থিত।
- ইনানী বিচ: প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে।
- বার্মিজ মার্কেট: কক্সবাজার শহরের বিখ্যাত কেনাকাটা স্থান।
- জাদিপাড়ার বৌদ্ধ মন্দির: পাহাড়ের উপরে অবস্থিত প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির।
লাবণী বিচ কক্সবাজারের অন্যতম আকর্ষণ। সমুদ্রের ঢেউ, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, জলক্রীড়ার উত্তেজনা এবং স্থানীয় সংস্কৃতির ছোঁয়া—সব মিলিয়ে লাবণী বিচ পর্যটকদের মনে একটি স্থায়ী ছাপ রেখে যায়। কক্সবাজারে ভ্রমণে এলে লাবণী বিচে কিছুক্ষণ সময় কাটানো যেন এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ও জীবনের কর্মব্যস্ততা থেকে কিছুটা প্রশান্তি পেতে, লাবণী বিচ ঘুরে আসা অবশ্যই উচিত। কক্সবাজার ভ্রমণ মানেই লাবণী বিচে একবার হলেও পা রাখা।